সাকিবের রংপুরকে উড়িয়ে ফাইনালে লিটনের কুমিল্লা

বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) কোয়ালিফায়ার-১এ রংপুর রাইডার্সকে ৬ উইকেটে হারিয়ে ফাইনালে উঠেছে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। আগে ব্যাট করতে নেমে জিমি নিশামের ঝড়ো ৯৭ রানের ইনিংসের ওপর ভর করে ৬ উইকেট হারিয়ে ১৮৫ রানের লড়াকু সংগ্রহ পায় রংপুর। লক্ষ্য তাড়ায় অধিনায়ক লিটন কুমার দাসের ক্যারিয়ার সেরা ৮৩ রানের ইনিংস ও তাওহিদ হৃদয়ের ঝড়ো ৬৪ রানের ইনিংসের ওপর ভর করে ৯ বল বাকি থাকতেই জয় তুলে নেয় কুমিল্লা। এ নিয়ে পঞ্চমবারের মতো বিপিএলের ফাইনালে উঠলো দলটি।

সোমবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে প্রথমে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের অধিনায়ক লিটন কুমার দাস। চলতি আসরে প্রথমবারের মতো এদিন রংপুরের হয়ে ওপেন করতে আসেন শামীম হোসেন পাটোয়ারি। অবশ্য ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই সাজঘরে ফেরেন তিনি। তানভীর ইসলামকে শট খেলার চেষ্টা করেন, উড়ে আসা বল তানভীরের হাত ছুঁয়ে গেলেও তালুবন্দি করতে ব্যর্থ হন। কিন্তু মিড অফে দাঁড়িয়ে থাকা আন্দ্রে রাসেল লাফিয়ে পড়ে লুফে নেন দারুণ এক ক্যাচ।

এরপর থিতু হয়েও ইনিংস বড় করতে পারেননি রনি তালুকদার। প্রথম ওভারে ১০ রান খরচ করা রোহানাত দৌল্লা বর্ষণ নিজের দ্বিতীয় ওভার করতে এসেই পেয়ে যান বিপিএলে প্রথম উইকেটের দেখা। বর্ষণকে অভিষেক উইকেটের স্বাদ দিতে গ্লাভস হাতে ক্যাচ নেন লিটন দাস। ১১ বল খেলা রনি ১৩ রানের বেশি করতে পারেননি। 

চোখের সমস্যায় টুর্নামেন্টের শুরুতে নিজেকে মেলে ধরতে না পারলেও, সময় গড়ানোর সাথে সাথে পুরনো সাকিবকে দেখা গেছে। তবে আজ সাকিবের ব্যাট থেকে আলো ছড়ায়নি মিরপুরে। বাউন্ডারিবিহীন ৯ বলের ইনিংসে সাকিব করেছেন কেবল পাঁচ রান। আন্দ্রে রাসেলের বলে ক্যাচ আউট হন বর্ষণের হাতে। সাকিবের দ্রুত বিদায়ে ২৭ রানে তিন উইকেট হারিয়ে বসে রংপুর রাইডার্স। মাত্র ৩৫ রান স্কোরবোর্ডে জমা করে পাওয়ারপ্লে শেষ করে রংপুর। 

এরপর অবশ্য ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ পায় রংপুর; জিমি নিশাম শুরু থেকেই ছিলেন আগ্রাসী মেজাজে। মাঝে তাকে সঙ্গ দিয়ে শেখ মাহেদী হাসান ১৭ বলে করেন ২২ রান। যেই বল হাতে সুনীল নারিন অ্যাকশনে, টপ এজে উইকেট হারান মাহেদী। আর তাতেই ভাঙে নিশামের সঙ্গে ২৬ বলে শেখ মেহেদীর গড়া ৩৯ রানের জুটি। ইনিংসের ১৩তম ওভার করতে এসে প্রথম পাঁচ বলে মুশফিক হাসান খরচ করেন ১৯ রান। নিশামের পর তার উপর ঝড় বইয়ে দেন নিকোলাস পুরান। কিন্তু শেষ ডেলিভারিতে স্লোয়ার করে সাফল্য পেয়ে উল্লাসে মাতেন মুশফিক। ৯ বলে ১৪ রান করে ফেলা ভয়ংকর পুরানের উইকেট পান।

৩১ বলে পঞ্চাশ স্পর্শ করেন জিমি নিশাম। আগের ম্যাচেও কুমিল্লার বিপক্ষে খেলেছিলেন অপরাজিত ৬৯ রানের ইনিংস। সবমিলিয়ে এবারের বিপিএলে নিজের তিন নম্বর ফিফটির দেখা পান রংপুরের এই কিউই তারকা। ফিফটির পর রংপুরের ইনিংস যেন শুধু নিশামময়! সপ্তম উইকেটে অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহানের সঙ্গে ৫৩ রানের জুটিতে কুমিল্লা বোলারদের ওপর ঝড়ের শুরুটা করেন নিশাম।  মুশফিকের শেষ ওভারে ৩ ছক্কা ও ২ চারে ২৮ রান তুলে সেঞ্চুরি থেকে ৩ রান দূরে থাকতে শেষ হয় রংপুরের ইনিংস। ৪৯ বলে ৮ চার ও ৭ ছক্কায় অপরাজিত ৯৭ রান করেন নিশাম। এদিন বল হাতে সবচেয়ে খরুচে বোলিং করার লজ্জার রেকর্ড গড়েন কুমিল্লার বোলার মুশফিক হাসান। ৪ ওভারে তিনি খরচ করেন ৭২ রান।

১৮৬ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে ইনিংসের প্রথম বলেই সাজঘরে ফেরেন সুনিল নারিন (০)। প্রথম বলে উইকেট হারানো কুমিল্লা এভাবে জিতবে, কেই ঘুর্ণাক্ষরেও ভাবেনি। কিন্তু তাওহীদ ও লিটন গড়া ৮৯ বলে ১৪৩ রানের জুটিই মূলত ব্যবধান গড়ে দেয়। এদিন রংপুরের কোনও বোলার পাত্তা পায়নি লিটন-তাওহীদের কাছে। ৪৩ বলে ৬৪ রান করে তাওহীদ আউট হলে জুটি ভাঙে তাদের। এরপর জনসন চার্লসও ৩ বলে ৬ রান করে বিদায় নেন।

জয় থেকে ১৩ রান দূরে থাকতে অধিনায়ক লিটন সাজঘরে ফেরেন। ৫৭ বলে ৯ চার ও ৪ ছক্কায় ৮৩ রান করে আউট হন এই ওপেনার। তাওহীদ নিজের ৬৪ রানের ইনিংস খেলতে ৫টি চার ছাড়াও ৪টি ছক্কা মেরেছেন। ৬৪ রানের ইনিংস খেলার পথে তাওহীদ ছাড়িয়ে গেছেন তামিম ইকবালকে। ৪৪৭ রান নিয়ে টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক এখন তিনিই। এরপর মঈন আলী ৫ বলে ১৩ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়ে ৯ বল আগেই দলকে জয়ের বন্দরে নিয়ে যান।

রংপুরের বোলারদের মধ্যে ফজল হক ফারুকী ২৭ রানে দুটি উইকেট নিয়েছেন। এছাড়া আবু হায়দার ও শেখ মেহেদী হাসান একটি করে উইকেট নিয়েছেন।

৬ উইকেটের জয়ে নিজেদের পঞ্চম ও টানা তৃতীয় ফাইনাল নিশ্চিত করে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স।

Sign up for the Newsletter

Join our newsletter and get updates in your inbox. We won’t spam you and we respect your privacy.