চট্টগ্রামে দ্বিতীয় দিনেই ব্যাকফুটে বাংলাদেশ

লিটনের এই আউট যেন আজ দ্বিতীয় দিনে বাংলাদেশের ব্যাটিংয়েরই প্রতীকী চিত্র

‘ম্যাচ পঞ্চম দিনে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য নিয়ে দল মাঠে নামবে’, ম্যাচের আগে সংবাদ সম্মেলনে এমনটাই বলেছিলেন বাংলাদেশের প্রধান কোচ রাসেল ডমিঙ্গো বলেছিলেন। তবে চট্টগ্রাম টেস্টে দ্বিতীয় দিন শেষে বাংলাদেশের জন্য কাজটি এখন বেশ কঠিনই।

ভারতের ৪০৪ রানের জবাবে দিন শেষে প্রথম ইনিংসে ১৩৩ রান তুলতেই ৮ উইকেট হারিয়েছে বাংলাদেশ, প্রথম ইনিংসে পিছিয়ে ২৭১ রানে। ইবাদত হোসেনের সঙ্গে মেহেদী হাসান মিরাজের নবম উইকেটে ৩১ রানের জুটি আপাতত অলআউট হওয়াটা আটকে রাখতে পেরেছে।

দ্বিতীয় সেশনে প্রথমবার ব্যাটিংয়ে নামা বাংলাদেশের মূল ক্ষতি করেছেন পেসার মোহাম্মদ সিরাজ ও বাঁহাতি স্পিনার কুলদীপ যাদব, দুজন মিলেই নিয়েছেন ৭ উইকেট। সিরাজ আঘাত করেন ইনিংসের প্রথম বলেই। তাঁর অফ স্টাম্পের বাইরের বলে খোঁচা দিয়ে উইকেটকিপার ঋষভ পন্তের হাতে ধরা পড়েন নাজমুল হোসেন। ইনিংসের প্রথম বলেই এ নিয়ে ৮ বার কোনো বাংলাদেশি ব্যাটসম্যান আউট হলেন। উমেশ যাদবের শরীর থেকে দূরের বল খেলতে গিয়ে স্টাম্পে বল ডেকে এনেছেন প্রথমবারের মতো তিনে আসা ইয়াসির।

সাকিবও বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি
সাকিবও বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি

দ্রুত ২ উইকেট হারানোর চাপ চা-বিরতির আগে আক্রমণে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন লিটন দাস ও অভিষিক্ত জাকির হাসান। অষ্টম ওভারে উমেশকে টানা দুটি চার মারেন লিটন, পরের ওভারে অশ্বিনকে ৩ বলের মধ্যে ২টি মারেন জাকির। বিরতির ঠিক আগে উমেশকে দারুণ তিনটি শটে টানা তিন চার মারেন লিটন।

লিটনের ইনিংস অবশ্য বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। সিরাজের নিচু হওয়া বলে ইনসাইড এজে বোল্ড হন তিনি। চার ওভার পর ফেরেন জাকিরও। এতক্ষণ বেশ ভালো টেম্পারামেন্ট দেখালেও সিরাজের অফ স্টাম্পের বাইরের বলে খোঁচা দেন। শুরুতে ধৈর্যের পরিচয় দেওয়া সাকিবও নিজের বিপদ ডেকে আনেন কুলদীপের দ্বিতীয় বলেই সামনে গিয়ে ফ্লিক করার চেষ্টায়।

নেমেই প্রথম বলে চার মারা নুরুল আউট হতে ধরেছিলেন একটু পরই। কুলদীপের বলে ভারত নিয়েছিল রিভিউ। এলবিডব্লুর ক্ষেত্রে উইকেটে আম্পায়ার্স কল হয়েছে ধরে নেওয়া হলেও কিছুক্ষণ পর টেলিভিশন আম্পায়ার দেখা শুরু করেন সম্ভাব্য ক্যাচও। প্যাডে লাগার পর নুরুলের ব্যাট বা গ্লাভসের কাছে বল থাকার সময় আবার আলট্রা এজে ছিল স্পাইক। শেষ পর্যন্ত অবশ্য টিভি আম্পায়ার আউট দেননি। পরে কুলদীপের বলে শর্ট লেগে ক্যাচ দিয়েই ফেরেন নুরুল, গিল নেন দারুণ রিফ্লেক্স ক্যাচ।

কুলদীপের পরের শিকার মুশফিক। সুইপ করে চার মারার পরের বলে ডিফেন্ড করতে গিয়ে মিস করে হন এলবিডব্লু। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই রিভিউ নিয়েছিলেন, তাতে কোনো লাভ হয়নি। বল ট্র্যাকিং দেখানোর আগেই হাঁটা শুরু করেন তিনি। আউট হওয়ার আগপর্যন্ত দারুণ নিয়ন্ত্রণ থাকলেও যে এক বলে গড়বড় হলো, তাঁকে ফিরতে হয়েছে তাতেই। সে ওভারেই গুগলি বুঝতে না পেরে বোল্ড তাইজুলও। ওয়ানডে সিরিজের নায়ক মিরাজ ও দশম ব্যাটসম্যান ইবাদত এরপর প্রতি-আক্রমণ করেছেন একটু। দুজনই মেরেছেন একটি করে চার ও একটি করে ছয়।

কিছুক্ষণ পর পরই উইকেট নেওয়ার উদ্‌যাপন করেছে ভারত।
কিছুক্ষণ পর পরই উইকেট নেওয়ার উদ্‌যাপন করেছে ভারত।

এর আগে ৬ উইকেটে ২৭৮ রান নিয়ে দিন শুরু করা ভারত রবিচন্দ্রন অশ্বিনের ফিফটি, কুলদীপ যাদবের ৪০ রানের ইনিংসে পেরোয় ৪০০। আজও শুরুতে ইবাদতের বলে ডিপ ফাইন লেগে লিটনের হাতে জীবন পাওয়া শ্রেয়াস আগের দিনের সঙ্গে যোগ করতে পারেন মাত্র ৪ রান, সেঞ্চুরি থেকে ১৪ রান দূরেই থামেন। সেই ইবাদতের লাইন ধরে রাখা বলেই বোল্ড হন তিনি।

শ্রেয়াসকে দ্রুত ফিরিয়ে ভারতের লেজ ছেঁটে দেওয়ার আশা বাংলাদেশের থেকে থাকলেও তা হতে দেননি রবিচন্দ্রন অশ্বিন ও কুলদীপ যাদব। চা-বিরতির আগে-পরে অষ্টম উইকেট জুটিতে তাঁরা তোলেন ৯২ রান, বাংলাদেশের বিপক্ষে ভারতের যেটি সর্বোচ্চ। আগের রেকর্ড ছিল অজিত আগারকার ও সুনীল যোশির ৫৬ রান, ২০০০ সালে বাংলাদেশের প্রথম টেস্টে। বাংলাদেশের বিপক্ষে যেকোনো দলেরই অষ্টম উইকেটে এর চেয়ে বেশি রানের জুটি আছে চারটি।

সে জুটি ভাঙেন মিরাজ, তাঁকে সামনে এসে খেলতে গিয়ে স্টাম্পিং হন ক্যারিয়ারের ১৩তম ফিফটি করা অশ্বিন। পরের ওভারে ফেরেন ক্যারিয়ার-সর্বোচ্চ ৪০ রান করা কুলদীপও। ২ ছক্কা মারা উমেশকে আউট করে ইনিংসে নিজের চতুর্থ উইকেটটি নেন মিরাজ।

Sign up for the Newsletter

Join our newsletter and get updates in your inbox. We won’t spam you and we respect your privacy.