মেসির মঞ্চে ছিলেন এমবাপ্পেও

পিএসজিতে তাঁরা সতীর্থ, বিশ্বকাপ ফাইনালে খেলেছেন প্রতিপক্ষ হয়ে । রয়টার্স

শান্ত পানিতেও যদি নৌকা বাওয়া না যায়, স্রোতের প্রতিকূলে সেটা কীভাবে সম্ভব!

কিলিয়ান এমবাপ্পে থাকলে সম্ভব। লুসাইল আইকনিক স্টেডিয়ামের পাগলাটে এক রাতের সাক্ষী ফুটবলের বিশ্বজোড়া হাজার-কোটি দর্শক। আর্জেন্টিনার মুঠোয় থাকা ম্যাচ যে ফ্রান্স প্রায় ছিনতাই করে নিয়ে যাচ্ছিল, সে তো প্রতিকূল স্রোতে এমবাপ্পে নামের স্পিডবোটের দুরন্ত গতির কারণেই।

সোয়া ঘণ্টা ধরে উড়তে থাকা আর্জেন্টিনাকে যেন এক ঝটকাতেই মাটিতে নামিয়ে আনলেন এমবাপ্পে। ২ গোলে পিছিয়ে থাকা ফ্রান্সকে ৯৭ সেকেন্ডের ঝড়ে এনে দিলেন সমতার জোড়া গোল। অতিরিক্ত সময়ে আর্জেন্টিনাকে আরও একবার এগিয়ে দিয়েছিলেন লিওনেল মেসি। কিন্তু এমবাপ্পের জন্য রাতটা ছিল যেন ফুটবল-রাজত্বের ব্যাটন বুঝে নেওয়ার। ১১৮ মিনিটে তাই আরেকটি পেনাল্টিতে আবারও বাঁচিয়ে তুললেন ফ্রান্সকে। টাইব্রেকারে গড়ানো ম্যাচে শেষ পর্যন্ত শিরোপা হয়তো জিততে পারেননি, তবে ফাইনালে হ্যাটট্রিক ও ৮ গোলে সোনালি বুট জিতে জানান দিয়ে গেলেন—ফুটবলে এমবাপ্পে-যুগ সমাগত।

আগামীর দিন যে এমবাপ্পের, তার প্রতীকী ছবি হতে পারে ম্যাচের ৮১ মিনিটে করা দ্বিতীয় গোলটি। মার্কাস থুরামের কাছে থেকে পাওয়া যে বলটি ডান পায়ের ভলিতে দূরের পোস্ট দিয়ে জালে পাঠালেন, সেটি এসেছিল মেসির কাছ থেকে বল কেড়ে আনার ধারাবাহিকতায়। আবার অতিরিক্ত সময়ের খেলায় ১০৮ মিনিটে মেসি দ্বিতীয়বার দলকে এগিয়ে দেওয়ার পরও কী দোর্দণ্ড প্রতাপেই না আর্জেন্টিনার রক্ষণে ত্রাস সৃষ্টি করে গেলেন তিনি!

মেসি ও এমবাপ্পে– বিশ্বকাপ ফাইনাল দুজনকে নিয়ে দুই প্রান্তে
মেসি ও এমবাপ্পে– বিশ্বকাপ ফাইনাল দুজনকে নিয়ে দুই প্রান্তে

২ দিন বাদে ২৪তম জন্মদিন পালন করতে যাওয়া এমবাপ্পে কাতারে এসেছিলেন বিশ্বকাপ জিততেই। চার বছর আগে রাশিয়ায় শিরোপা হাতে নিয়ে মাত্র ১৮ বছর বয়সেই জ্বলে উঠেছিলেন ফুটবলের নতুন তারা হয়ে। হাতছানি ছিল কিংবদন্তি পেলের মতো পঁচিশের আগে দুটি ট্রফি জিতে যাওয়ার। লুসাইলে কাল শেষ পর্যন্ত লক্ষ্যটা পূরণে ছুটলেনও নিজের সর্বশক্তি দিয়ে। একপেশে লড়াইয়ে পরিণত হওয়া ফাইনালকে একক প্রচেষ্টায় টেনে নিয়ে গেলেন টাইব্রেকার পর্যন্ত।

মেসির জন্য সাজানো বাগানকে এলোমেলো করলেন বারবার, যেন এই প্রাপ্যটা তাঁরই। কয়েক মুহূর্তের জন্য সেটা পারলেনও অদম্য এমবাপ্পে। তবে শেষ পর্যন্ত নিজের আরেকটি শিরোপা জয়ের লক্ষ্য পূরণ করতে না পারলেও বিশ্ব ফুটবলের জন্য মহাতারার আগমনী বার্তাই দিয়ে গেলেন।

১৯৬৬ বিশ্বকাপের ফাইনালে জার্মানির বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করেছিলেন ইংল্যান্ডের জিওফ হার্স্ট। এরপর বিশ্বকাপ ফাইনাল হয়েছে ১৩টি। আর কোনো হ্যাটট্রিক দেখেনি ফুটবলের মহামঞ্চ। ৫৬ বছর পর কাল লুসাইলে হার্স্টের রেকর্ডে ভাগ বসালেন এমবাপ্পে। ১১৮ মিনিটের যে পেনাল্টি শটে বিশ্বকাপ ফাইনাল ইতিহাসের দ্বিতীয় হ্যাটট্রিকে নাম লিখিয়েছেন, সেটি তাঁকে এনে দিয়েছে কাতার বিশ্বকাপের সোনার জুতাও।

৮ গোল করে কাতার বিশ্বকাপের গোল্ডেন বুট এমবাপ্পের
৮ গোল করে কাতার বিশ্বকাপের গোল্ডেন বুট এমবাপ্পের

মেসির মতো ৫ গোল নিয়ে নেমেছিলেন ফাইনালে। দুই দফায় গোল করে সোনালি জুতার লড়াইয়ে এগিয়েও গিয়েছিলেন আর্জেন্টাইন মহাতারকা। কিন্তু হ্যাটট্রিকে সেটি নিজের করে নিয়েছেন ২৩ বছর বয়সী এই ফরোয়ার্ড। দুই বিশ্বকাপে ১২ গোল করে উঠে গেছেন বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ গোলদাতার তালিকায় যৌথভাবে পঞ্চম স্থানে, পেলের পাশে। বিশ্বকাপ ইতিহাসে সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়ে যাওয়ার অপার সুযোগ ২৩ বছর বয়সী এমবাপ্পের সামনে। সেখানেও যদি থাকে প্রতিকূলতা?

প্যারিসের দাঙ্গা-হাঙ্গামায় ভরপুর বঁদি এলাকা থেকে উঠে এসেছেনই নানা প্রতিকূলতা মাড়িয়ে। বেড়ে ওঠাকালের সেই সংগ্রামী জীবনের স্মৃতিই তাঁর অদম্য মনোবলের ওষুধ, নিস্তরঙ্গ জলে তোলপাড় ঘটানোর শক্তি। প্রতিকূলতা তাকে কীভাবে আটকায়?

Sign up for the Newsletter

Join our newsletter and get updates in your inbox. We won’t spam you and we respect your privacy.